নারগিসপাঠ প্রসঙ্গে
টানা দুইদিন পড়ে নারগিস উপন্যাসটি শেষ করা হল। বহুদিন পর একটি উপন্যাসকে এ টানা সময় দিতে হল। দিতে হল বললে ভুল হবে, উপন্যাসটিই নিয়ে নিল। বন্ধুরা বলে, কমলকুমারে আমি আমার রুচি নষ্ট করেছি। ফলত আর কাউরে রুচিতে ধরে না! কথাটা আংশিক সত্য। নারগিস ধরেছে। কেন ধরেছে?
স্পষ্ট দুটো কারণে।
প্রথমত উপন্যাসটির বর্ণনার ভেতর এমন একটা ড্যামস্মার্ট অসংকোচ ভঙ্গি আছে যা সহজে উপেক্ষা করা যায় না। দ্বিতীয় কারণ ভেতরের কাহিনীটি একটি কেউটে সাপের মত তীব্র বেগে তার বান্ধবীর সাথে যেতে যেতে পরে তারেই পথে পাস কইরা নিজেই এক নতুন গোলক ধাঁ ধাঁ র জগতে চলে গেছে। পলক না ফেলে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
তুলনার খাতিরে ফিরে দেখা যাক- রবীন্দ্রনাথের পর তিন বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগ পর্যন্ত একটা ফাঁকা সময় এককালে বাংলা কথাসাহিত্যে তৈয়ার হইছিল। সে ফাঁকা সময়টারে ভরাট করেছিলেন শরৎচন্দ্র। শরৎচন্দ্র মূলত ঠাকুরের বিনোদিনী চরিত্ররেই ভরসা করে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর নারীদেরে বাঙালির শিউরে ওঠা জায়গাগুলাতে নিয়া গেছিলেন, প্রেমসমেত। ভেতরে ভেতরে মিচকা বাঙালি হা করে সেদিন সে গরম গরম কাহিনীগুলো গিলেছিল। পরে শুধু প্রেমরে ভরসা করে আরো জলযোগ করে ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়রা বেশ বাজার সরগরম করেছিলেন। শরৎকে আমি বলি মিসিং লিংকের ঔপন্যাসিক।
পূর্ববঙ্গের কথাসাহিত্য পরে আর সে মিসিং লিংকের সাহিত্যিক খুব পায় নাই। পাইছে ফাল্গুনি বাবুদের উত্তরাধিকার। তাঁরাও গত হইয়াছেন। অখনে ব্যতিক্রমবাদে তস্য তস্য ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়ে ঢাকার কথাসাহিত্য সয়লাব। তাঁরা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথের জোৎস্নাকে আরো তরল করে ঢালিয়া চলিয়াছেন।
Sort: Trending