
Bangladesh Cricket : The Tigers
অসাধ্য কে সাধন করে দেখালো বাংলাদেশ! এ যেন হেরে যাওয়া ম্যাচে জয়ের তৃপ্তি । ক্ষুধার্ত বাঘের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নেওয়ার থেকে কোন অংশে কম ছিলোনা আজকে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে জয় করা প্রথম ওডিয়াইটি। তাও আবার মাত্র এক উইকেটের বিনিময়ে। ক্রিকেট যে এক অনিশ্চয়তার খেলা তা আবারও মনে করিয়ে দিলো আজকের ম্যাচটি। যা বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা বহুদিন মনে রাখবে!
ঘটনাবহুল এই ম্যাচটিতে শেষ উইকেটে মিরাজ আর মুস্তাফিজুর রহমানের অনবদ্য ৫১ রানের পার্টনারশিপে জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু কেউ কি ভেবেছিলো এই ম্যাচটিতে জয় পাবে সাকিব-মিরাজরা? আমিতো বিন্দুমাত্রও আশা করিনি। খেলার একটা সময় তো মনে হয়েছিলো বাংলাদেশ হেরেই গেছে।
এই ম্যাচটিতে শুরতে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতে ভারতের পক্ষে যথারীতি ওপেনিং ব্যাটিংয়ে আসেন ভারতের দুই পরিচিতমুখ ক্যাপ্টেন রোহিত শার্মা এবং শেখর ধাওয়ান। মিরপুরের এই স্লো পিচে তারা শুরটা মোটামোটি ভালোই করেছিলো। তবে ইন্ডিয়া শিবিরে প্রথম আঘাত হানে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। শেখর ধাওয়ানকে বোল্ট করে সাজঘরে ফিরায় সে।
তার বিদায় ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে আসেন তারকা খেলোয়ার বিরাট কোহলি। সম্প্রতি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ভারতের এই লিজেন্ড। তবে এই ম্যাচে ভালো করতে সক্ষম হয়নি সে। ৪৮ এবং ৪৯ রানে ক্যাপ্টেন রোহিত এবং বিরাট কোহলিকে সাজঘরে ফিরায় বাংলাদেশের প্রানভোমরা সাকিব-আল হাসান। তাদের বিদায় কেএল রাহুল এবং আইয়ার দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করলেও আইয়ার বিদায় নেয় পেইসার এবাদতের প্রথম শিকার হয়ে।
পরবর্তীতে একমাত্র কেএল রাহুল ছাড়া আর কেউই মাঠে টিকে থাকতে সক্ষম হয়নি। সাকিব এবাদতের আগুন ঝরা বোলিংয়ে ৪২ তম ওভারেই ১৮৬ রানে অলআউট হয় টিম ইন্ডিয়া। এই ম্যাচে বাংলাদেশর প্রথম স্পিনার হিসেবে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেয় সাকিব আল হাসান। ইবাদত হোসন শিকার করে চারটি উইকেট, আর বাকি একটি মিরাজের জালে ধরা পরে। ইন্ডিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৩ রান সংগ্রহ করে কেএল রাহুল।
ব্যাটিংয়ের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মত হয় বাংলাদেশের। প্রথম বলেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার নাজমুল হাসান শান্ত। তার এমন পারফরম্যান্স সত্যিই হতাশাজনক। শুরতেই উইকেট হারিয়ে কিছুটা হলেও প্রেশারে পরে যায় দল। দলীয় ২৬ রানের মাথায় দলকে আরো চাপে ফেলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরে এনামুন হক বিজয়। এতে করে ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কায় পরে বাংলাদেশ দল। ১৮৬ রানের টার্গেটও তখন মনে হচ্ছিলো পাহাড় সমান!
ঠিক সেই সময়টাতেই দলের হাল ধরেন ক্যাপ্টেন লিটন দাস এবং সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ৪৮ রানের জুটি গড়েন দুজনে মিলে। তবে ৭৪ রানের মাথায় সাকিব বিদায় নিলেও দল ভালো ভাবে আগাচ্ছিলো জয়ের বন্দরে। কিন্তু ১২৮ রানে পরপর দুই উইকেট পরে গেলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ইন্ডিয়ার দিকে। একটা সময় ১৩৫ রানে নয়টি উইকেটই হারায় তারা। হাতে মাত্র আর একটি উইকেট। এই অবস্থা থেকে জয় তুলে নেওয়া কি সম্ভব! উত্তরটা অবশ্যই না।

ESPNcricinfo
কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করলো মিরাজ এবং মোস্তাফিজ। শেষ উইকেটে ৫০ রানের বেশি পার্টনারশিপ গড়ে প্রমান করলো তারাও পারে। রেকর্ডে নিজেদের নাম লিখিয়ে ভারতের বিপক্ষে এক উইকেটে জয় পেলো বাংলাদেশ। ভারতের সাথে এতো ক্লোজ রেঞ্জের ম্যাচ কখনো জিতেনি সাকিব-লিটনরা। তবে আজ মিরপুরে হাজারো দর্শকের সামনে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধটা হয়তো নিয়েই নিলো!! সাবাশ বাংলাদেশ।