নারায়ণগঞ্জের জীবনযাত্রা!

in BDCommunitylast year (edited)

IMG_20221223_180259.jpg

বেশ কিছুদিন হলো ইন্ট্রানের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরে মুভ করেছি। নারায়ণগঞ্জ শহরটা আমার কাছে বড়ই অচেনা। এর আগে কখনোই এই দিকটাতে আশা হয়নি। ছোটবেলায় নানার মুখে শুনেছিলাম এই শহরের গল্প। স্বাধীনতার আগে তিনি নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত আদমজী পাটকলে ট্যাকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতো। পাশাপাশি একটি দোকানও চালাতো। একটা সময় পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দোকান বিক্রি করে দিয়ে গ্রামে চলে আসে। তার ভাস্যমতে সেই সময়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ ছিল খুবই বন্ধুসুলভ।

যাইহোক দীর্ঘ চার বছর পর ক্যাম্পাসের মায়া ত্যাগ করে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে চলে আসি নারায়ণগঞ্জ শহরে। ইন্ট্রানের সুবিধার্থে ইন্ডাস্ট্রির পাশেই পাঁচতলা ভবনের পাচ তলায় একটি রোম ভাড়া নেই দুইমাসের জন্য। আমাদের ইন্ট্রানের সময় দুইমাস হওয়াতে আমরা কথা বলে দুই মাসের জন্যই রোম ভাড়া নেই। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস দেখতে পেয়ে প্রথমে খুব খুশিই হয়েছিলাম। চাইলে মাঝে মাঝে রান্না করেও খাওয়া যাবে। তবে আমার এই খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না। জানতে পারলাম এখানে গ্যাস নাকি সোনার হরিস। দিনে দু-একবার আসে কিছুক্ষনের জন্য। তাও আবার দিনে না; রাত বারোটার পর।

আমাদের ইন্টার্ন শুরু হওয়ার কথা ছিলো গতমাসের ১৫ তারিখ। কিন্তু নানান ভেজালের কারনে তা পিছিয়ে এ মাসের একতারিখ শুরু হয়। অবশ্য আমরা দু'দিন আগেই চসে এসেছিলাম রোম গুছানোর সুবিধার্থে।

ওহ! একটি কথা তো বলাই হয়নি। এখানে আমি একা না। ইন্ট্রান সাধারনত গ্রুপ ভিত্তিক করতে হয়। তাই ডিপার্টমেন্টের একজন বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। খুব ভদ্র ছেলে, তাই ওকে বেছে নেওয়া। এখানে এসে রোম গুছাতেই একদিন পার হয়ে যায় দু'জনের। তার উপর নতুন করে সবকিছু কেনাকাটার ঝামেলা তো আছেই।

এখানে এসে সবার আগে পরিচয় চারতলার একটি কিউট মেয়ের সাথে। নাম তার নুসরাত। বড্ড চঞ্চল প্রকৃতির সে। বিকেলে আমি একা ছাদে বসেছিলাম। হঠাৎ করি একটি পোষা বিড়াল নিয়ে হাজির সে।

IMG_20221223_180814.jpg

ছাদে এসেই সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, " এই তোমরা কি নতুন উঠছো এই বাসায়? "
আমি উত্তর দিলাম " হা"। সাথে প্রশ্ন জুড়ে দেই তোমার নাম কি? কোনতলায় থাকো? ইত্যাদি ইত্যাদি!
সে সুন্দরভাবে সবগুলো প্রশ্নের জবাব দিলো। তার কথা ভাব -ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিলো সে আমার আগে থেকেই পরিচিত। যাইহোক তার সাথে বিড়ালটাও তার মতো বেশ কিউট ছিলো।

একতারিখ থেকে শুরু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ইন্ট্রান। যার শুরু প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাচটা, সপ্তাহে ছয়দিন। কিন্তু দেখা যায় কাজ শেষে ফিরতে ফিরতে রাত সাতটা/আটটার মতো বেযে যায়। সারাদিনের ক্লান্তি চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। খাবার খেয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত বারোটা। সকাল ঘুম থেকে ঊঠেই আবার ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যাওয়া। এভাবেই চলছে জীবন।

সপ্তাহের ছুটির দিনে ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। কাপড় ধোওয়া, রান্না করা, ঘর গুছানো আরো কতো কি! ছুটির দিনের বিকেলটা বেশ সুন্দর। ছাদ থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। চারদিকে শুধু উচু দালান আর দালান। গাছের দেখা পাওয়া বড়ই মুশকিল। তবে বিকেলে সূর্যাস্তটা অনেক সুন্দর।

IMG_20221223_180240.jpg

IMG_20221223_180311.jpg

এখন নিজেকে সময় দেওয়া মতো সময়টাও খুজে পাওয়া যায়না। এটাই হয়তো চাকরী জীবন। বাড়ি থেকে এসেছি মাস পেরিয়ে আরেক মাস হতে চললো। এখন আর যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনা। জীবনের ভালো সময়টা পার করে ফেলেছি। এখন সময় অর্পিত দায়িত্ব পালনের।

Sort:  

আমার অসম্ভব পছন্দের শহর নারায়ণগঞ্জ। কেমন ওল্ডস্কুল আবহাওয়া চারপাশে। মারিয়ো পূজোর ডন কর্লিয়নিকে খুঁজে পাই ওখানে।

হা! শহরটা বেশ ভালোই লেগেছে আমার কাছেও। জীবনে প্রথম ওইদিকটায় যাওয়া হলো।